পঁচিশ বছর আগের এক ভোর। রোদ তখনও ঠিকমতো ওঠেনি। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে আমি একটা ব্যাগ, একটা কম্বল আর একটা বালিশ হাতে নিয়েছি। জীবনে প্রথমবার হোস্টেলের উদ্দেশে রওনা হচ্ছি। আশেপাশে ব্যস্ততা, তবু আমার চোখ বারবার আটকে যাচ্ছে মায়ের মুখে। তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখে অদ্ভুত এক উজ্জ্বলতা—যা আসলে পানি। গলায় ধরে আসা কণ্ঠে বললেন, — "সময়মতো খেয়ে নিস কিন্তু!"

মা সবসময়ই আমার খাওয়াদাওয়া নিয়ে খুব যত্নবান ছিলেন। আমি অনেক কিছু খেতে পারতাম না। অথচ এতগুলো সন্তানের মাঝেও মা কেমন করে যেন রান্নাঘরের এক কোণায় আমার জন্য আলাদা মেনু রেখে দিতেন। আমার না-খাওয়া জিনিসগুলো যাতে আমার সামনে না পড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখতেন।

সেদিন, এত আদর আর কান্না দেখে আমি একটু বিরক্তই হয়েছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম,
— “এই তো অল্প কিছুদিনের জন্য যাচ্ছি, এত কান্নাকাটির কী আছে?”

তারপর সময় গড়িয়েছে। কলেজ শেষ, চাকরি, সংসার—জীবনের বৈচিত্র্যময় সব প্রাপ্তি আর অভিজ্ঞতা ঘিরে ধরেছে আমাকে। এখন আমি ঢাকায় থাকি। শব্দদূষণ, জ্যাম, কোলাহলে ভরা একটা জীবন। এসবের কোনোটাই মা পছন্দ করেন না। শরীর খারাপ না হলে আসতেও চান না।

মাঝে মাঝে কিছু টাকা পাঠাই, বছরে ছয়-সাতবার যাই। ভাইবোনেরা থাকায় হয়তো তেমন অভাব বোধ করেন না। কিন্তু আমি জানি, আমার জন্য তার একান্ত একটা জায়গা আজও ফাঁকা পড়ে আছে।

সেদিন ভেবেছিলাম, অল্পদিনের জন্য যাচ্ছি।
আজ বুঝি, মা সেইদিনই আমাকে হারিয়ে ফেলেছেন।

Md. Faruque Hossain
Sales team & tools specialist


Post a Comment

Previous Post Next Post