এক ক্লান্ত সন্ধ্যার গল্প

সন্ধ্যা নামলেই শহরের আলোগুলো জ্বলে ওঠে। আমি তখন অফিস থেকে ফিরে ঘরের দরজায়। শরীরটা চুপচাপ, মনটা হালকা ভারী। গায়ে ক্লান্তির চাদর। ঘরে ঢুকেই ছোট্ট ছেলেটা জিজ্ঞেস করে,
— “বাবা, সারাদিন কী করলা?”

প্রশ্নটা শুনেই হেসে ফেলি। কী করলাম সারাদিন?

চাইলেই বলতে পারতাম—
দুপুর অব্দি তিনটা মিটিং। তারপর নতুন টার্গেট নিয়ে প্ল্যানিং। অফিসের পলিসি নিয়ে বসা, নীতিগত একটা চিঠি লিখলাম, গোটা দশটা ফাইল প্রসেস করলাম, ক্লায়েন্টদের কয়েকটা ফোন দিলাম, আর দিনজুড়ে ভাইবার আর হোয়াটসঅ্যাপে নির্দেশনা দিলাম টিমকে।

কিন্তু এগুলো বললে কি ছেলেটা বুঝবে? কিংবা একজন বাইরের মানুষ?
হয়তো ভাববে—এই তো, চেয়ারে বসেই তো ছিলাম! এর মাঝেই আবার ক্লান্তি কিসের?

আমাদের সমাজে ‘কাজ’ মানে এখনো অনেকের চোখে শরীরের ঘাম, কায়িক শ্রম বুঝে। যে শ্রমে হাত চলে, পা চলে, শরীর ব্যস্ত থাকে। কিন্তু যে মস্তিষ্ক চলেছে নীরবে, একটানা, যাকে দেখে বোঝা যায় না—সে শ্রমের হিসাব রাখে কে?

অথচ দিনভর মস্তিষ্কে চলেছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নীতিগত ভারসাম্য রক্ষা, সমস্যার সমাধান, ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকি বিশ্লেষণ, বিনিয়োগের সুরক্ষা। এই না-দেখা, না-ছোঁয়া, অজস্র ‘মেধাশ্রম’ই তো আজকের আধুনিক সমাজের ভীত। এই খাটনি গায়ে ঘাম আনে না, কিন্তু মন চায় বিছানা। ক্লান্তি চুপচাপ এসে বসে কাঁধে।

এই মেধাশ্রম আর কায়িক শ্রম মিলিয়েই তো তৈরি হয়েছে সভ্যতা

তাই যখন কেউ বলে, "কি করছো সারাদিন?"
মনে হয়—— "একটা অদৃশ্য যুদ্ধ। চিন্তা আর চেতনার যুদ্ধ"

Md. Faruque Hossain
Sales team & tools specialist

Post a Comment

Previous Post Next Post