
পৃথিবীতে অল্প যে ক'টি অনুভূতিকে নিঃসন্দেহে ‘স্বর্গীয়’ বলা যায়, তাদের একটি হলো প্রথমবার বাবা হওয়া। যেদিন আমার ছেলেকে কোলে নিয়েছিলাম, মনে হয়েছিল স্বয়ং ঈশ্বর যেন আমাকে স্পর্শ করেছেন। ছোট্ট শরীর, গালের নরম মাংস, নিঃশ্বাসের কুয়াশায় ভরে থাকা ওর মুখ... আমি আর পৃথিবীর সব কিছুর মাঝখানে তখন কেবল একটিই সেতু—ভালোবাসা।
আমি আমার বাবার ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। আমি বাবার প্রতি যে ভালোবাসা, টান, মমতা অনুভব করেছি তা হয়তো অবচেতনভাবেই নিজের সন্তানের কাছ থেকে পাওয়ার আশায় বসে ছিলাম। আজ বুঝি, সেই অপেক্ষা বৃথা যায়নি। আমার ছেলে আমাকে ভালোবাসে, সম্মান করে। আমাকে দেখে দেখে হাঁটতে শেখে, বলার ভঙ্গি, এমনকি দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিও যেন আমার অনুকরণে গড়া। আমি ওর আদর্শ। এই অনুভব গর্বে বুক ভরে দেয়। তবুও… সময় যেন চুপিচুপি অনেক কিছু নিয়ে নেয়।
কখন যে আমার কোলে ওঠা বন্ধ করে দিল বুঝতেই পারিনি। হাঁটতে গেলে এখন আর হাত ধরতে চায় না। নিজেই জুতো পরতে পারে, বোতাম লাগাতে পারে। একাই স্কুলে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি যেন একটু একটু করে ওর দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাচ্ছি। যেদিন ও বেশি দুষ্টুমি করে, সেদিন ওর মার বিচারের ভয়ে আমি অফিস থেকে ফিরলেও কাছে আসতে চায়না।
একদিন ও আরো বড় হবে। নিজের জামাকাপড় নিজেই পছন্দ করে কিনবে। আমাকে না জানিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে। কখনও উপহার নিয়ে ফিরবে—বলে উঠবে,
— “এইটা তোমার জন্য বাবা।”
সেদিন আমি হয়তো একটু বেশি ক্লান্ত থাকব। ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে মাথা ঘুরাবে, আর আমার সেই ছেলে—যে একদিন আমার হাত ধরেই প্রথম হাঁটতে শিখেছিল—সে-ই আমার হাত ধরে নিয়ে যাবে হাসপাতালের পথে।
Post a Comment